(বাংলা ভাষা)
*/ দূষণ কাকে বলে?
*/দূষণ বলতে পরিবেশের কোনো অবাঞ্ছিত বা ক্ষতিকারক পদার্থের মিশ্রণকে বোঝায় যা প্রাকৃতির ভারসাম্য নষ্ট করে এবং জীবজগত ও পরিবেশের ক্ষতি করে, একে দূষণ বলে।
*/ দূষণ মূলত চার প্রকার।
যেমন -1/বায়ু দূষণ। 2/জল দূষণ। 3/শব্দ দূষণ। 4/মাটি দূষণ।
1/ বায়ু দূষণ-
*/ বায়ু দূষণের কারণ - বায়ু দূষণ মূলত দুইভাবে হয় যেমন প্রাকৃতিকভাবে ও মানুষের কারণে
প্রাকৃতির কারণে যেমনভাবে বায়ু দূষণ ঘটে বনে শুকনো গাছের ডালে ডালে ঘর্ষণ লেগে আগুন লাগে সেই আগুনের ফলে ধোয়ার সৃষ্টি হয় এবং সেই ধোঁয়া বায়ুতে মিশে বায়ু দূষণ ঘটে।
মানুষের কারণে বায়ু দূষণ- যেমন মানুষের দ্বারা বিভিন্ন কারণে বায়ু দূষণ ঘটতে পারে যেমন কলকারখানার বিষাক্ত ধোঁয়া এবং বিভিন্ন যান্ত্রিক যানবাহনের ধোঁয়া রান্নাঘরের ধোয়া ইত্যাদি বায়ু দূষণের কারণ হতে পারে।
*/বায়ু দূষণের প্রভাব- শ্বাসকষ্ট, হাঁচি,কাশি,হৃদরোগ, ব্রংকাইটিস ,ক্যান্সার, দূষিত বায়ুর কারণে পশু পাখি পালিয়ে যায়, কার্বন ডাই-অক্সাইড ও অন্যান্য গ্যাসের কারণে গ্লোবাল ওয়ার্মিং সৃষ্টি হয়, ফলে পৃথিবীর মাত্রা দিন দিন বৃদ্ধি পায়, আবহাওয়ার ভারসাম্য নষ্ট হয় এর ফলে এসিড বৃষ্টি সৃষ্টি হয়, এবং এই এসিড বৃষ্টির ফলে মানুষ ও পশু পাখির অনেকে ক্ষতিগ্রস্ত হয় ইত্যাদি।
2/ জল দূষণ-
*/মাটি দূষণের কারণগুলো- জল দূষণের বিভিন্ন কারণে হতে পারে যেমন জলে রাসায়নিক সার ব্যবহার করা মাছকে অতিরিক্ত খাবার দেওয়া পুকুরের জলে সার দিয়ে জামাকাপড় ধোঁয়া চান করা কৃষি জমিতে অতিরিক্ত সার কীটনাশক ব্যবহার করা এরফলে বর্ষার সময় জমি বেয়ে জল পুকুরে এসে জল দূষণের একটি প্রধান কারণ হতে পারে এবং ফ্যাক্টরির ও কলকারখানার ময়লা জল এসে জল দূষণ হয় শ্যাওলা ও কচুরিপানা অতিরিক্ত হয়ে যাওয়ার কারণে জল দূষণ হতে পারে ইত্যাদি।
*/জল দূষণের প্রভাব- দূষিত জল ব্যবহার করলে আমাদের যেসব ক্ষতি হতে পারে যেমন -চুলকানি, আমাশা,টাইফয়েড কলেরা,পুকুরের জল দূষিত হয়ে গেলে পুকুরের মাছ মারা যেতে পারে,দূষিত জল জমিতে ব্যবহার করলে ফসলের ক্ষতি হতে পারে এছাড়াও আমাদের নানান রকমের সমস্যা হতে পারে।
3/ শব্দ দূষণ -
*/শব্দ দূষণের কারণগুলো- শব্দ দূষণের অনেক গুলি দিক আছে যেমন ফ্যাক্টরি মেশিনের শব্দ ,যান্ত্রিক যানবাহনের শব্দ, লাউডস্পিকারে গান বাজানো, জোরে হর্ন বাজানো ও ফ্যাক্টরিও কল কারখানার কাজের শব্দ, জেনারেটরের শব্দ, ড্রিল মেশিনের শব্দ, বাসের শব্দ, সাইকেলের শব্দ, ট্রেনে শব্দ, বিমাননে শব্দ, বাজার হাটের শব্দ, মোটর সাইকেলের শব্দ, এছাড়াও নানান কারণে শব্দ দূষণ হয়।
*/ শব্দ দূষণের প্রভাব- শব্দ দূষণের কারণে আমাদের যেসব সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে যেমন-ঘুমের ঘাটতি, মাথা ব্যথা, রক্তের চাপ বেড়ে যাওয়া, মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় ব্যঘাত ঘটে, সামাজিক সম্পর্ক মধ্যে ভাঙ্গন সৃষ্টি, মানসিক চাপ থাকা, একাকীত্ব ভাব পড়াশোনায় মন না লাগা, বন্যপ্রাণীদের জীবন বিপন্ন হয়, পাখিরা জায়গা ছেড়ে চলে যায়, হৃদরোগের ঝুঁকি বেড়ে যায় এছাড়াও আমাদের নানান সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়।
4/ মাটি দূষণ -h
*/মাটি দূষণের কারণগুলো- মাটি দূষণের যে কারণ হতে পারে যেমন মাটিতে প্লাস্টিক, কাচের টুকরো, ছেঁড়া কাপড়, অতিরিক্তত সার কীটনাশক ব্যবহার করা, কারখানার বর্জ্য, বাসাবাড়ির আবর্জনা, পাথর বা ধাতু, পলিথিনের টুকরা নির্দিষ্ট কোন জায়গায় না ফেলে মাটিতে ফেলা , গাড়ি ও কারখানা তেল, গাছপালা কেটে ফেলার ফলে মাটির উপরিভাগ ক্ষয়প্রাপ্ত হয় ,জমিতে সার ও কীটনাশক অতিরিক্ত পরিমাণে ব্যবহার করার কারণে মাটি দূষণ ঘটতে পারে ইত্যাদি।
*/মাটি দূষণের প্রভাব- মাটি দূষণের ফলে মাটির যেসব ক্ষতি হতে পারে যেমন -মাটির উর্বরতা কমে যাওয়া, ভালো পরিমাণে ফসল না হওয়া, পুকুরপাড়ে ও পাহাড় অঞ্চলে ধসনামা, দূষিত মাটির ফসল ক্যান্সারের কারণ হতে পারে, সার ও কীটনাশক এর ব্যবহার ফলে ছোট ছোট জীব ও কেঁচো পাখি ও অন্যান্য জীব ক্ষতিগ্রস্ত হয়, দূষিত মাটিতে গাছপালা সঠিকভাবে বেঁচে থাকতে পারে না ও অন্যান্য ক্ষতি হতে পারে।
*/দূষণ নিয়ন্ত্রণের কিছু দিক-আমরা দূষন পুরোপুরিভাবে কমাতে না পারলেও কিছুটা পরিমাণ হলেও কমাতে পারি।
বায়ু দূষণ নিয়ন্ত্রণ-বেশি বেশি পরিমাণে গাছ লাগানো, সৌর শক্তি ব্যবহার করা, ফ্যাক্টরি ও কলকারখানায় এয়ার ফিল্টার লাগানো, তাপ শক্তি উৎপাদনকারী যানবাহন ব্যবহার কমানো, সাইকেল রিক্সা ব্যবহার করা, কাঠের বদলে জ্বালানি হিসেবে গ্যাস ব্যবহার করা, ফসলের আগাছায় আগুন জ্বালানো বন্ধ করতে হবে, শুকনা আবর্জনায় আগুন না জ্বালিয়ে নির্দিষ্ট জায়গায় ফেলা।
জল দূষণ নিয়ন্ত্রণ-নোংরা আবর্জনা জলে না ফেলা, পুকুরের মাছকে পরিমান মত খাবার দেওয়া,ফসলে সার কীটনাশকের ব্যাবহার কমানো, পুকুরের জলে প্রাণী গোসল করা বন্ধ করতে হবে।
শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্র-অপ্রয়োজনীয় হর্ন বাজানো বন্ধ করতে হবে, লাউড স্পিকারে গান বাজানো বন্ধকরতে হবে, বেশি বেশি পরিমাণে গাছ লাগাতে হবে, ঘুমানোর সময় ইয়ার ফোন ব্যবহার করতে হবে, এছাড়াও যে কারণ গুলিতে শব্দ দূষণ হয় সেগুলো এড়তে হবে।
মাটি দূষণ নিয়ন্ত্রণ-মাটিতে কাঁচ,আবর্জনা ফেলা বন্ধ করতে হবে , কৃষি জমিতে অতিরিক্ত রাসায়নিক ব্যবহার কমাতে হবে, বেশি বেশি পরিমাণে গাছ লাগাতে হবে, ফ্যাক্টরিও কল কারখানার জন্য কড়া পদক্ষেপ নিতে হবে, নদীর পাড়ে ও পাহাড়ি অঞ্চলের ধারগুলোতে গাছ লাগাতে হবে ইত্যাদি।
(Photos used in this post are from Unsplash)